নিজস্ব প্রতিনিধি , বাঁকুড়া : পুজো মিটলেও আপাতত উৎসবের রেশ কাটছে না প্রাচীন মল্লগড় বিষ্ণুপুরে। সুপ্রাচীন রীতি মেনে দশমী থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে শুরু হয়েছে রাবনকাটা নাচ। চলবে দ্বাদশী পর্যন্ত। সেই নাচেই আপাতত মাতোয়ারা গোটা মল্লগড়। রাবন কাটা নাচের পাশাপাশি দশমীর দিন বধ করা হয়েছে ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদকে, একাদশিতে বধ করা হয়েছে কুম্ভকর্ণকে আর দ্বাদশী অর্থাৎ আজ সন্ধ্যায় রাবণ বধের মাধ্যমেই শেষ হবে এই রাবন কাটা নাচ।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর প্রাচীন মল্ল রাজাদের রাজধানী। এই শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হাজারো ইতিহাস আর গল্পকথা। যার সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ভিন্ন ধারার সংস্কৃতি। রাজ আমলে জন্ম হলেও সেই সংস্কৃতির ধারা আজো অব্যাহত বিষ্ণুপুরে। রাবন কাটা নাচ তেমনই এক সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে দিব্যি টিকে রয়েছে বিষ্ণুপুরে। কথিত আছে রামের হাতে রাবণ নিহত হওয়ার পর বানর সেনারা যে বীর রসের নাচে মেতে উঠেছিল তাকে স্মরণ করেই একসময় বিষ্ণুপুরের বুকে জন্ম নিয়েছিল রাবণ কাটা নাচ। এই নাচের বিশেষ বৈশিষ্ঠ হল চার জন নৃত্যশিল্পী হনুমান, সুগ্রীব, জম্বুবান ও বিভিষণ সেজে কাড়া নাকাড়া সহ বিভিন্ন প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নাচ পরিবেশন করে বেড়ান বিষ্ণুপুরের রাজ পথে পথে। একসময় মল্ল রাজাদের উৎসাহে এই নৃত্য শিল্পীরা মল্ল রাজধানীর রাজপথে পথে নাচ দেখিয়ে মানুষকে বিনোদন জোগাতেন। খুশি হয়ে রাজা শিল্পীদের হাতে তুলে দিতেন মোহর ও অন্যান্য উপঢৌকন। সেই রাজারা এখন নেই। নেই তাঁদের রাজত্বও। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিষ্ণুপুরে একদল শিল্পী টিকিয়ে রেখেছেন এই নাচ। এখন রাবন কাটা নাচের শিল্পীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষকে বিনোদন দিয়ে বেড়ান। বিনিময়ে গৃহস্থের সদস্যরা যা তুলে দেন তাই সংগ্রহ করেন। দশমী থেকে দ্বাদশী এই তিনদিন দিনভর বিষ্ণুপুরের পাড়ায় পাড়ায় নাচ দেখানোর পর সন্ধ্যা হলেই শিল্পীরা হাজির হন শহরের একপ্রান্তে থাকা অস্থল নামের এক জায়গায়। সেখানে দশমীর দিন বধ করা হয় ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদকে। একাদশিতে কুম্ভকর্ণ বধ ও দ্বাদশীর সন্ধ্যায় রাবন বধ করে শেষ হয় নাচ। শিল্পীদের দাবী বহু কষ্টে এই শিল্পকে তাঁরা বাঁচিয়ে রেখেছেন। বিনিময়ে যা মেলে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। তারপরও শুধুমাত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে আজো তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টেনে নিয়ে চলেছেন এই সংস্কৃতিকে।